Olympic Day 23 June

সম্প্রীতির আহ্বানে অলিম্পিক গেমস

অলিম্পিক দিবস ২৩ জুন, সারা দুনিয়ায় গর্বের দিন৷ এই দিনটার আলাদা একটা ঐতিহ্য আছে৷ ক্রীড়া আন্দোলনের মহত্ব বলতেই অলিম্পিক গেমস৷

অলিম্পিক গেমসের সূচনা ১৮৯৬ সালে গ্রিসে৷ সূচনায় একদিনের এই প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল এথেন্স শহরে৷ এখন তা বিশ্বজনীন৷ অলিম্পিক শুধু একটা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়৷ ক্রীড়া প্রাঙ্গন থেকে শান্তি, সংহতি, ঐক্য ও মানবতার পতাকা উত্তোলন হয়৷ অলিম্পিকের চেতনায় বন্ধুত্বের হাত শক্ত হয়৷ শুধু পদক জয়ের লক্ষ্যে অলিম্পিক গেমস উত্তাল হয়ে ওঠে না— উজ্জ্বল হয়ে ওঠে উৎকর্ষ, অধ্যবসায় ও একাগ্রতা৷ এই মূল্যবোধে অলিম্পিক দিবস সবার মনে অন্য অনুভূতি তৈরি করে৷

গ্রিসে ১৮৯৬ সালে অলিম্পিক শুরু হলেও, সভ্যতার বিবর্তনে তার রূপ বদলেছে৷ তাই আধুনিক অলিম্পিক গেমসকে সামনে রেখে সারা বিশ্বের মানুষ এক ছাতার নীচে মিলন মেলায় বন্ধু হয়ে ওঠেন৷ একে অপরের সংস্কৃতির সঙ্গে একাকার হয়ে যান৷ সব ভাষার সমন্বয়ে ঐক্যের বার্তা৷ বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা৷ খেলার মাঠে বন্ধুত্বের পরিচয়৷ ক্রীড়া জাগরণে স্বপ্নের আকাশ উঁকি‍ দিয়ে যায়৷ গেমসে অংশগ্রহণকারীরা দেশের জন্যে আদর্শ হয়ে ওঠেন৷ এটাই তো অলিম্পিকের মাহাত্ম্য৷

পরিবর্তনের ছোঁয়ায় অলিম্পিক গেমসে এসেছে আধুনিকতা৷ দৌড় থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল৷ তারপরে পাঁচটা ইভেন্ট সংযোজন হয়৷ আর এখন তো একের পর এক ইভেন্ট সংযোজন হচ্ছে৷ ফুটবল যেমন প্রতিযোগিতাকে আকর্ষণ করে তুলেছে, তেমনই ক্রিকেট আসাতে উৎসাহ লক্ষ করা যাচ্ছে৷ তবে বিশেষ করে অ্যাথলিটদের দক্ষতা ও লড়াই গুরুত্ব পায়৷ সাঁতার থেকে টেবলটেনিস৷ হকি থেকে ভলিবল, জুডো থেকে সাইক্লিং, কুস্তি থেকে বক্সিং বা টেনিস৷ সব ইভেন্টকে কেন্দ্র করে প্রতিযোগীদের লড়াকু মনোভাব দর্শকদের মোহিত করে তোলে৷

Flag of Olympic

অলিম্পিকের পতাকায় পাঁচটা বলায় থাকে৷ এই পাঁচটি বলয়ের আলাদা একটা তাৎপর্য আছে৷ আফ্রিকা, আমেরিকা, ওসেনিয়া, ইউরোপ ও এশিয় মহাদেশের প্রতিনিধিরা এই মহান মিলন যজ্ঞে সামিল হয়ে থাকেন৷ কোনও রকম বৈষম্য বা ভেদাভেদ নয়৷ অংশগ্রহণ করাটা হল মূল উদ্দেশ্য৷ অলিম্পিকের স্লোগান হল সিটিয়াম, অলটিয়াস ও ফোটেনিয়াম৷ অলিম্পিকের হাতছানিতে মানুষের জয় হোক৷পাঁচটি বলয়ে শোভা পেয়েছে নীল, হলুদ, কালো, সবুজ ও লাল রঙ৷ উদীয়মান প্রতিভাদের লড়াকু মনোবাবে বলয়গুলো আলোকিত হয়ে ওঠে অলিম্পিক গেমস ভিলেজে৷

তাই চার বছর অন্তর অন্তর অলিম্পিক গেমসের জন্যে সারা বিশ্ব অপে‍ক্ষা করে থাকে৷ ১৯৩৬ সালে বার্লিন অলিম্পিক গেমস থেকে প্রতীক নিয়ে মশাল দৌড় শুরু হয়৷ সেরা ক্রীড়াবিদরা দেশের আদর্শ হয়ে ওঠেন৷ গর্বিত হয় দেশ৷

১৯৬৮ সালে মেক্সিকো অলিম্পিক গেমস থেকে ম্যাসকট ব্যবহার শুরু করা হয়৷ এই ম্যাসকটে সাধারণতঃ দেশের সংস্কৃতি, কোনও পশু বা কৃতী মানুষের মূর্তি প্রকাশ পায়৷ ১৯৮০ সালে মস্কো অলিম্পিক গেমসে ভালুকছানা ‘মিশা’ ম্যাসকটে জায়গা পেয়েছিল৷ আর এই ‘মিশা’ ম্যাসকট বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তায় আলোড়ন তুলেছিল৷

অলিম্পিক গেমসে একটা সময় ভারতীয় হকি দলের দাপট দেখতে পওয়া গিয়েছিল৷ সোনার পদকটা তখন ভারতের হাতের মুঠোয় ছিল৷ পরবর্তী সময়ে ভারত সেই জায়গা থেকে ছিটকে গেছে৷ তবে এখন ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে. ১৯৫২ সালে হেলসিকিং অলিম্পিক গেমসে একক কৃতিত্বে ভারতের কে ডি যাদব ব্রোঞ্জ পদক পান কুস্তিতে৷ ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিক গেমসে প্রথম সোনা জয়ের কৃতিত্ব দেখালেন শুটিংয়ে অভিনব বিন্দ্রা৷ তারপরে অলিম্পিক গেমস থেকে পদক এসেছে নীরজ চোপড়া, পি ভি সিন্ধু, সুশীল যাদব, মেরি কম, কর্ণম মালেশ্বরী, সানিয়া নহেওয়াল, চিরাবাই চানু, সাক্ষী মালিক, রবিকুমার, বজরং পুনিয়া, নবলীনা বোরগোহাই, লিয়েন্ডার পেজ, সুশীল কুমার গগন নারাং, বিজেন্দ্র সিং, যোগেশ্বর দত্ত, মানু ভাকের ও অমন সেহরাওত৷ তবে অল্পের জন্য পদক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন মিলখা সিং, পি টি ঊষা, দীপা কর্মকার ও জয়দীপ কর্মকার৷

আরও দ্রুত, আরও উচ্চতা ও আরও শক্তিশালী এই অলিম্পিকের এই মন্ত্র সবাইকে প্রেরণা দেয়৷ অলিম্পিক পতাকা রিংয়ের মাঝে সবাই একত্রিত হয়৷ সম্প্রীতি গড়ে তোলে৷ জাতীয় ঐক্যকে প্রতিষ্ঠা করে৷ অলিম্পিক শুধুমাত্র গেমস নয়, জীবন দর্শনের পরিচয়৷ সাফল্যের পথে এগিয়ে চলা৷ অলিম্পিক একটা আন্দোলন৷ নবজাগরণের ইতিহাস৷ বিশ্বমঞ্জে নিজের দেশকে প্রতিষ্ঠা করা৷ আন্তর্জাতিক আঙিনায় দেশকে আলোকিত করা৷ জয় হোক অলিম্পিক গেমসের৷